ক্রিকেটের ইতিহাসে যে পাঁচটি নতুন পরীক্ষার ল্যাবরেটরি ছিল বিশ্বকাপ


 ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডে যখন প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর বসে, তখন সেই টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রধান বা একমাত্র লক্ষ্য ছিল আইসিসি-র শূন্য কোষাগারে কিছু টাকাপয়সা আমদানি করা।

আন্তর্জাতিক বিমা সংস্থা প্রুডেন্সিয়াল ওই টুর্নামেন্টে ১ লক্ষ পাউন্ড স্পনসরশিপের অঙ্গীকার করেছিল, সেই ভরসাতেই মাত্র আঠারোটা একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হওয়ার পরই ওই ফরম্যাটের 'বিশ্বকাপ' আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আইসিসি।

ইংল্যান্ড ততদিনে ডজনখানেক 'ওয়ানডে' খেলে ফেললেও ভারত, পাকিস্তান বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো টিমগুলো কিন্তু সেই ফরম্যাটে দু'তিনটের বেশি ম্যাচ খেলেনি। অস্ট্রেলিয়া তো মানতেই চায়নি ওয়ানডে ক্রিকেটের আদৌ কোনও ভবিষ্যৎ আছে বলে!

অথচ এর অনেক পরে টিটোয়েন্টি বা টেস্টের বিশ্বকাপ বা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ চালু হলেও আজও কিন্তু ওয়ানডে বিশ্বকাপের বিজয়ী দলই ক্রিকেট দুনিয়ার অঘোষিত চ্যাম্পিয়নের স্বীকৃতি পেয়ে আসছে।

আর বাস্তবতা এটাই, যে প্রথম বিশ্বকাপের পরবর্তী প্রায় অর্ধশতাব্দীতে সেই ওয়ানডে টুর্নামেন্টই কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সেরা মঞ্চ হয়ে উঠেছে - সেটা স্পিনারকে দিয়ে বোলিং আক্রমণের সূচনা করানোই হোক, কিংবা পিঞ্চ হিটারদের দিয়ে ওপেন করিয়ে শুরুতেই বিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা!

এবং এরকম উদাহরণ দেওয়া যায় আরও অজস্র।

লর্ডসে দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের ম্যাচ। ১৯৭৯ছবির উৎস,GETTY Pictures

লর্ডসে দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের ম্যাচ। ১৯৭৯

তবে বিশ্বকাপে প্রয়োগ করা এই 'এক্সপেরিমেন্ট'গুলোর কোনও কোনওটা ধোপে টিঁকেছে, কোনওটা আবার সময়ের দাবিতেই বাতিলের খাতায় চলে গেছে। পুরনো ফর্মুলা নাকচ করে এসেছে নতুন ফর্মুলাও।

এই প্রতিবেদনে আমরা ফিরে তাকিয়েছি এমনই পাঁচটি নতুন এক্সপেরিমেন্টের দিকে - বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মঞ্চেই যেগুলোর প্রথম ব্যাপক প্রয়োগ হয়েছিল।

এর সবগুলোই যে মারাত্মক 'সুপারহিট' হয়েছিল তা অবশ্য বলা যাবে না - তবে এর প্রতিটা নিয়েই ক্রিকেট দুনিয়াতে হইচই হয়েছিল বিস্তর, এগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি দিয়ে তর্কে মেতে উঠেছিলেন বোদ্ধা আর ক্রিকেট-অনুরাগীরা!

অফব্রেকে নাজেহাল বুন আর মার্শ

১৯৯২ সালে পঞ্চম বিশ্বকাপেই প্রথমবারের মতো চালু হয়েছিল ক্রিকেটারদের রঙিন পোশাক, সাদা বল, কালো সাইটস্ক্রিন আর দিন-রাতের ম্যাচ।

কিন্তু টুর্নামেন্টে তার চেয়েও বড় চমকটা দিয়েছিলেন অন্যতম স্বাগতিক দেশ নিউজিল্যান্ডের ক্যাপ্টেন মার্টিন ক্রো, তার দলের স্পিনার দীপক প্যাটেলকে দিয়ে এক প্রান্ত থেকে বোলিং আক্রমণের সূচনা করিয়ে।

কেনিয়ায় জন্মানো দীপক প্যাটেল বহুদিন ইংল্যান্ডে খেললেও নির্বাচকদের নজরে পড়েননি, খানিকটা বাধ্য হয়েই কেরিয়ারের মাঝামাঝি তিনি নিউজিল্যান্ডে 'ইমিগ্রেট' করেন।

নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলেও অবশ্য জায়গা পেতে তাকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছিল, সেখানে তার প্রতিযোগিতাটা ছিল জন ব্রেসওয়েলের সঙ্গে। কিন্তু '৯২র বিশ্বকাপ দীপক প্যাটেলের কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

দিপক প্যাটেল। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সময়ছবির উৎস,GETTY Pictures

ছবির ক্যাপশান,

দীপক প্যাটেল। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সময়

সম্পর্কিত খবর :

ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নয়টি ম্যাচের তারিখ ও ভেন্যু

২৭ জুন ২০২৩

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডের খেলোয়াড়দের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স যেরকম

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পরিবর্তন আসছে তিনটি নিয়মে, বদলে যাবে ক্রিকেট খেলা

১৭ মে ২০২৩

স্পিনারের হাতে পালিশ ওঠার আগেই নতুন বল তুলে দেওয়ার সেই পরিকল্পনা সেবার দারুণভাবে খেটে গিয়েছিল, আর মার্টিন ক্রো-র সেই গেমপ্ল্যান সার্থকভাবে বাস্তবায়ন করেছিলেন দীপক প্যাটেল।

অস্ট্রেলিয়ার ডাকসাইটে ওপেনিং জুটি ডেভিড বুন আর জেফ মার্শ-ও শুরুর ওভারগুলোতেই দীপক প্যাটেলের অফব্রেক সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন, এমন কী বেশ ছোট মাঠেও তারা প্যাটেলকে তুলে মাঠের বাইরে ফেলতে পারেননি।

গোটা টুর্নামেন্টেও মাত্র ৩.১০ ইকোনমি রেট নিয়ে সেরা বোলার হয়েছিলেন দীপক প্যাটেল, যদিও সেমিফাইনালে অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তানের কাছে হেরে নিউজিল্যান্ডকে ওই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল।

তবে সাদা বলের ক্রিকেটে স্পিনারকে দিয়ে বোলিং ওপেন করানোর ধারা ক্রমেই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে, এক সময়ে যা অকল্পনীয় ছিল সেটাই ক্রিকেট দুনিয়ায় আজ বেশ পরিচিত প্র্যাকটিস হয়ে উঠেছে।

সুপরিচিত ক্রীড়া ভাষ্যকার আয়ুষ মঞ্জুনাথের কথায়, "ক্রিকেট দুনিয়া এখন এটার সঙ্গে বেশ অভ্যস্ত। এখন টিটোয়েন্টি ম্যাচেও আমরা হামেশাই স্পিনারকে দিয়ে অ্যাটাক ওপেন করাতে দেখি, আইপিএল

Post a Comment

Previous Post Next Post